• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জকিগঞ্জের বীরাঙ্গনা এসনু এবার স্বীকৃতি পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার

bijoy71news
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০১৫

40591সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের ৪১ বীর নারীকে ‘বীরাঙ্গনা’র মর্যাদা দিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করেছে। একাত্তরের পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত ৪১ বীরাঙ্গনার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তারা চলতি বছরের জুলাই থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের মত সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এই ৪১ বীর নারীর মধ্যে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের এসনু বেগমের নামও রয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই অনাহার-অর্ধাহারে জীবন সংগ্রাম করে আসছেন এসনু বেগম। ১৮ বছর আগে বাবা আর ১২ বছর পূর্বে মা মারা যান এসনুর। ছেলে-মেয়ে কেউ নেই। আত্মীয় বলতে আছেন দুই বোন। বৃদ্ধ বয়সেও শীতলপাটি ও বাঁশ দিয়ে ডাম, চাটাই ইত্যাদি তৈরী করে দিনে দুমুঠো ভাত জোগান। অভাব পিছু না ছাড়লেও কোনদিন কারো কাছে হাত পাতেননি তিনি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মা-বাবার সংসারে তিনি ছিলেন একা। দুই বোন লেবু বিবি ও লেচু বিবির বিয়ে হয়ে যায়। প্রাইমারীর গন্ডি পাড়ি দিতে পারেননি। যুদ্ধ শুরুর আগেই লেখাপড়া ছেড়ে দেন এসনু। যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ১৩/১৪ বছরের কিশোরী। শুধু তার গ্রাম নয় আশপাশ গ্রামে তার মতো সুন্দরী কমই ছিল। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর স্থানীয় এক মনোরঞ্জন যোগাতার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার উপর। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে একদিন গভীর রাতে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তার বাড়িতে হানা দেয় পাকবাহিনী। চোখমুখ বেঁধে নিয়ে যায় শাহগলী বাজারস্থ পাকিস্থানী বাহিনীর বন্দীশিবিরে। চলে অমানবিক নির্যাতন। চার দিন ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে পৈশাচিক নির্যাতন চালায় তারা। একাত্তরের বীরাঙ্গনা এসনু বেগমকে সেই ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়া করে। ঐ ঘটনা মনে হলে তার বুক এখনো ধড়ফড় করে।

সিলেটের সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মনতইল গ্রামের ময়গুন বেগম ও রিয়াছদ আলীর মেয়ে এসনু বেগমের বয়স এখন ৫৯। দেশ স্বাধীন হওয়ায় ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এতদিন তার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আজো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে তাকে সম্মান জানায়নি। তবে অবশেষে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি জুটেছে তার কপালে।

একাত্তরের সেই পৈশাচিক কাহিনীর কথা বলতে গিয়ে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন এসনু বেগম। চারদিন ক্যাম্পে আটকে রেখে তাকে নির্মম নির্যাতন করার পর ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেই অভিশপ্ত দিনের কথা ভেবে এখনো আঁতকে উঠেন তিনি। ওই ঘটনার পর লজ্জায় মানুষের সামনে বের হতেন না তিনি। কোনো অপরাধ না করেও কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।

অন্য কেউ বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় যুদ্ধের কয়েক বছর পর বাধ্য হয়ে এসনুর বাবা-মা গ্রামের বিবাহিত বয়ো:বৃদ্ধ জমির আলীর সাথে বিবাহ দেন তাকে। দরিদ্র জমির আলী মাছ ধরে সংসার চালাতেন। পরপর দু’টি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও জন্মের পরপরই মারা যায় তারা। বিয়ের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় বার্ধক্যজনিত রোগে বিনা চিকিৎসায় মারা যান জমির আলী। এবার আশ্রয় হয় পিতা-মাতার ছোট্ট ভিটায়। অনাহারে অর্ধাহারে এখন কাটছে তার একার সংসার। জীবন সায়াহ্নে এসেও ওই পৈশাচিকতার বিচার চান তিনি।