বি৭১নি ডেস্ক :
নিদাহাস ট্রফি তাঁর জমানায় ঘটেনি। তবে স্টিভ রোডস ঠিকই জানেন, কী হয়েছিল সেখানে। দুই বছর আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর আগুন–উত্তাপের ম্যাচটিও জানা আছে বাংলাদেশ কোচের। রোডস দেখেছেন, ম্যাচে আগুনে পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলাদেশকে সেটি সংক্রমিত করে বেশি। এ কারণে গতকালের ম্যাচে কার্যত বাংলাদেশ দর্শকের আসনে থাকলেও ড্রেসিংরুমে কোচের মনে কুডাক ডাকছিল, এতে না শেষে বাংলাদেশেরই ক্ষতি হয়!
কোচের আশঙ্কাই শেষে সত্যি হয়েছে। আম্পায়ারের ভুল নো বলের ডাক, তর্ক-বিতর্ক, এতসব কাণ্ডে খেলা ৯ মিনিট বন্ধ থাকল। খেলা শুরুর পর যেন অন্য বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামল। বাংলাদেশকে যেন পেয়ে বসল ভূতে! ১ রানের মধ্যে ফিরে এলেন টপ-মিডল অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান!
কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচই এলেন। রোডস প্রথমেই বলে দিলেন, ওই ঘটনায় ম্যাচের ছন্দটা বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ম্যাচ হারের বড় কারণ এটাই। কোচ এ–ও বললেন, এমনটা হতে পারে, সেই শঙ্কা আগেই করেছিলেন। তাই বারবার সবাইকে সতর্ক করছিলেন, ড্রেসিংরুমে যেন চলমান ঘটনা সংক্রমিত না করে, ‘আমি আমাদের খেলোয়াড়দের শান্ত রাখার চেষ্টায় ছিলাম। চেষ্টা করেছি মাঠে বার্তা পাঠাতে, বলতে চেয়েছি, ম্যাচে আমরা বেশ ভালো অবস্থায় আছি। খেলা শুরু হলে তোমরা যেন মনোযোগ ধরে রেখে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যাও।’
শুধু বিতর্ক বলে নয়; চাপের পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলাদেশ স্নায়ু ধরে রাখতে পারে না। এটা জানা ছিল বলেই বেশি সতর্ক ছিলেন কোচ, ‘এর আগে এমন অনেক ঘটনায় আমি দেখেছি, আগে বেশ কিছু ম্যাচে এসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে আমরা ঝামেলায় পড়েছিলাম। তাই আমার মূল লক্ষ্য ছিল খেলোয়াড়েরা যেন এর সঙ্গে কিছুতেই জড়িয়ে না পড়ে। উইকেটে থাকা দুই খেলোয়াড়কে আমি ধন্যবাদ দেব। ওরা একপাশে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মাঠে যেখানে যুক্তি-তর্ক হচ্ছিল, তার থেকে নিজেদের দূর সরিয়ে রেখেছিল। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা ছিল, ড্রেসিংরুম যেন শান্ত থাকে। নির্ভার থাকে। আমার অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, এ ধরনের পরিস্থিতি আরও ঝামেলাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের তাই উচিত ছিল খেলায় পুরো মনোযোগ ধরে রাখা। আবেগতাড়িত হয়ে আমরা যেন উল্টো ক্ষতির মুখে না পড়ি। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো, শেষ পর্যন্ত আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার নিজেরও চেষ্টা ছিল, আমি যেন এসবের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ি।’
এখান থেকে দলকে শিখতেও বললেন কোচ, ‘এটা অবশ্যই আমাদের জন্য শিক্ষণীয় থাকবে। আবার এ–ও তো সত্যি, ওই ঘটনার পর উইকেটে এসেই আমরা পরপর কয়েকটি বড় শট খেলেছি। ক্রিকেট সত্যিই খুব অদ্ভুত এক খেলা। ধরুন ওই শট দুটোই যদি ফিল্ডারের হাতে না যেত? তখন মাত্র দুজন ফিল্ডারই কিন্তু সীমানার প্রান্তে ছিল। ওই দুটি শট যদি ফিল্ডারের কাছে না যেত, আমরা দুটি চার পেতাম। তখন আবার খেলার ছন্দ আমাদের দিকে ফিরে আসত। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই ওই কয়েকটি শট যেভাবে খেলা উচিত ছিল আমরা তা খেলিনি। ফলে এখান থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, এরপর শট খেলতে হলে ঠিকভাবে খেলতে হবে। আমি বলতে পারব না কেন ওই সময়ে নেমে আমরা তাড়াহুড়ো করে শটগুলো খেলতে গেলাম। হয়তো আমরা একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। ফলে এখান থেকে আমাদের শিখতে হবে, যখন এ ধরনের মাথা গরমের পরিস্থিতি তৈরি হয়, চাপের পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমাদের শান্ত থাকতে হবে। আমাদের এসব জায়গায় আরও উন্নতি করার আছে। আসলে শেখার তো কোনো শেষ নেই।’