বি৭১নি ডেস্ক :
ক্রিকেটের সংষ্করণ যত ছোট হয়, ততই ভয়ংকর হয়ে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফের এর প্রামণ পাওয়া গেল। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দাপট দেখিয়ে জিতল ক্যারিবীয়রা। টাইগারদের ৮ উইকেটে হারিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, ৫৫ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে ব্রাফেট বাহিনী। দাপুটে এ জয়ে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল তারা।
বাংলাদেশের দেয়া ১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো সূচনা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়ে ফেরেন এভিন লুইস। আরিফুল হকের ক্যাচে পরিণত করে তাকে ফেরান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ফেরার আগে শাই হোপের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়েন তিনি।
ঝড় তুলে লুইস (১৮) ফিরলেও থেকে যান হোপ। তার ঝড় চলতেই থাকে। বাংলাদেশ বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে ফিফটি তুলে নেন তিনি। শুধু ফিফটি বললে ভুল হবে, গড়েন দ্রুততম ফিফটি হাঁকানোর রেকর্ড। মাত্র ১৬ বলে ফিফটি করেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা এ ওপেনার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এটি তৃতীয় দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সবচেয়ে কম বলে ফিফটি করার রেকর্ড যুবরাজ সিংয়ের। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১২ বলে ফিফটি করেন ভারতীয় এ হার্ডহিটার। দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড কলিন মানরোর। ২০১৬ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে মাত্র ১৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন এ কিউই।
শেষ পর্যন্ত ২৩ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৫ রান করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন হোপ। মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ বানিয়ে বিস্ফোরক এ ওপেনারকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জয় তখন সফরকারীদের হাতছোঁয়া দূরত্বে। বাকি কাজ সারেন নিকোলাস পুরান ও কিমো পল। ৮ উইকেট ও ৫৫ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করেন তারা। ১৭ বলে ৩ চারে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন পুরান। আর ১৪ বলে ১ চারের বিপরীতে ৩ ছক্কায় ২৮ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন পল।
টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশের পর ওয়ানডে সিরিজটাও জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজের পালা। এটি জিতে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ জিততে চায় টাইগাররা। সেই লক্ষ্যে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন স্বাগতিক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তবে শুরুটা যাচ্ছেতাই হয় বাংলাদেশের। টপঅর্ডারদের যেন সাজঘরে ফিরতে তর সইছিল না। সূচনালগ্নে শেলডন কটরেলের বলে কার্লোস ব্রাফেটকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল। খানিক বাদেই ওশান থমাসকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন লিটন দাস। তার ক্যাচও তালুবন্দি করেন ব্রাফেট। সেই রেশ না কাটতেই কটরেলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে রোভম্যান পাওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে সৌম্য সরকার ফিনিশ হলে চাপে পড়ে টাইগাররা।
সেই চাপের মধ্যে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। তিনিও উইকেট ছুড়ে আসেন। তবে প্রতিপক্ষ ফিল্ডারদের হাতে লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে নয়। রানআউটে কাটা পড়ে যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এ পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেই কটরেলের বলে উইকেটের পেছনে শাই হোপের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফলে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
আরিফুল হকের প্রতিভা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বিপিএল দিয়ে নিজেকে জানান দেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেন না। আরও একবার ব্যর্থ এ হার্ডহিটার। পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি তিনিও। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের বলে নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।
অল্পক্ষণ পর ব্রাফেটের বলে পুরানাকে ক্যাচ দিয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ফিরলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাংলাদেশ। তবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের মধ্যেও টিকে ছিলেন সাকিব। ধ্বংস্তূপের মাঝেই অসাধারণ ফিফটি তুলে নেন তিনি। শেষদিকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে কটরেলের কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এর আগে ৪৩ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। এটি তার ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি।
সাকিব ফিরলে গুটিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় স্টিভ রোডসের দল। নিজের ব্যাটিং সত্ত্বার প্রমাণ দিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। কিমো পলের বলে শাই হোপের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। পরক্ষণেই মোস্তাফিজুর রহমানকে সরাসরি বোল্ড করে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন পল।
এদিন উইন্ডিজের সেরা বোলার কটরেল। একাই ৪ উইকেট তুলে নিয়ে টাইগারদের গুঁড়িয়ে দিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। ২ উইকেট ঝুলিতে ভরেন পল।