• ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বোর্ড নির্ধারণ করল ১৮শ, শিক্ষকরা নিচ্ছেন ৫ হাজার টাকা

bijoy71news
প্রকাশিত নভেম্বর ১৩, ২০১৮

বি৭১নি ডেস্ক : টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। প্রতি ফরমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি।

একইসঙ্গে ফরম পূরণে পাঁচ হাজার টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ফি, কোচিং ফি, স্কুল উন্নয়ন ফিসহ বিভিন্ন খরচের নামে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে তিনগুণ টাকা আদায় করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তবে এ বিষয়ে মুখ খুললে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নানা জটিলতা তৈরির হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষকরা।

জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় না করতে নির্দেশ দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। বিষয়টি শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়।

এবার বিজ্ঞান বিভাগের জন্য (৪র্থ বিষয়সহ) বোর্ড ফি ১ হাজার ৩৮৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৪১৫ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৮০০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে (৪র্থ বিষয়সহ) বোর্ড ফি ১ হাজার ২৯৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৩৮৫ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৬৮০ টাকা এবং মানবিক বিভাগের জন্য (৪র্থ বিষয়সহ) বোর্ড ফি ১ হাজার ২৯৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৩৮৫ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বোর্ড।

সেইসঙ্গে ২০১৭-১৮ ও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন হবে বিধায় এ দুই বিষয়ে বোর্ড ফি দিতে হবে না।

কিন্তু বোর্ড নির্ধারিত এই ফি বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনগুণ ফি বাড়তি নিচ্ছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬২ জন শিক্ষার্থী (নিয়মিত-অনিয়মিত) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। তাদের ফরম প্রতি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরিন আক্তার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল আলম। তাদের সহযোগিতা করছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা করে ফি আদায় করছেন শিক্ষকরা। অতিরিক্ত ফি নেয়া হলেও তাদের কোনো স্লিপ দেয়া হয় না। কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করেও আদায় করা হয়েছে।

এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকরা কোচিং করানো হবে বলে শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা দেয়। তবে অতিরিক্ত ফি না দিলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলে শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। পাশাপাশি পরীক্ষায় জটিলতা সৃষ্টি করা হবে বলেও শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন শিক্ষকরা।

অভিভাবক আব্দুল মান্নান, দুদু মিয়া, নবী ও নুর মিয়া বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে তিনগুণ বেশি টাকা নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা কীভাবে দেব। অভিযোগ করলে শিক্ষকরা সাফ জানিয়ে দেন, পরীক্ষা দিতে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪ হাজার ৭০০ এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ৪ হাজার ৬০০ টাকা করে দিতে হবে। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। এখন আমরা কার কাছে যাব। তাহলে কী আমাদের ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল আলম বলেন, আমরা সরকারের নির্ধারিত টাকার বাইরে কোনো টাকা নিচ্ছি না। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি মিথ্যা। যেসব শিক্ষার্থী অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছে তাদের ছবি তুলে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তবে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম মেনেই আমরা টাকা নিচ্ছি। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দের অনুমতিতে এই টাকা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত যে টাকা নেয়া হচ্ছে তা শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করানোর জন্য। ওই টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হবে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যান্য কাজে এই টাকা খরচ করা হবে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফজলুজ্জামান রশীদ বলেন, সার্বিক বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা নেয়া হচ্ছে। এটা নিজেরা কিংবা কোনো শিক্ষককে লাভবান করার জন্য নয়। সরকার নির্ধারিত বোর্ড ফি, কেন্দ্র ফি, অনলাইন খরচ, কোচিং ফি, সেশন ও উন্নয়নসহ স্কুলের বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে এই অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, এ বছর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন অতিরিক্ত টাকা আদায় না করে যেজন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। একইসঙ্গে অতিরিক্ত টাকা না নেয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে ওসব বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বি৭১নি/জেএ/বিনিডে