বিশেষ প্রতিবেদক:
সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিরন মিয়া। দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে। নানা কারণে জনপ্রতিনিধি ও দলীয় পদবি নিয়ে বিতর্কিত এ চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আলোচনা হয় মোটা অঙ্কের টাকায় হিরন ভাগিয়ে নেন শীর্ষ এ পদটি। পরপর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া নিয়েও তাকে নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই! ক্ষমতা খাটিয়ে আর প্রশাসনের জোরে কেন্দ্র দখল করেই তিনি চেয়ারম্যান হন বলে গুঞ্জন আছে।
গত দুদিন আগে মোগলগাঁও এলাকাবাসী তার গোপন গুদাম থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী উদ্ধার করেছেন। তারা বলছেন কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চেয়ারম্যান হওয়া হিরন মিয়া নির্বাচনে বিনিয়োগ করা টাকা আদায়ের এই একটি প্রমাণ।
স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বিভিন্ন সময় জনগণের জন্য আসা ত্রাণ সামগ্রী বন্টন না করে নিজের ব্যক্তিগত গুদামে বিক্রির জন্য রেখেছিলেন এ জনপ্রতিনিধি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এলাকার মানুষ ওই গুদামে প্রবেশ করে কয়েক`শ বস্তা চালসহ বিভিন্ন পণ্য উদ্ধার করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন চেয়ারম্যান হিরন। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙ্গে পড়েছে মোগলগাঁও ইউনিয়নের পুরো কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় রীতিমতো শাসকের ভূমিকায় ছিলেন হিরন। নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দু’বারই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এক সময়কার ব্রিটেনে বিএনপির রাজনীতি করা ‘পল্টিবাজ’ এ ব্যক্তি। দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকেরও। আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সবখানেই আলোচিত হয় হিরনের নাম।
সূত্রমতে, হিরন মিয়া যুক্তরাজ্যের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং এদেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আদর্শ লালন করতেন। অঢেল অর্থ সম্পদের মালিকও তিনি। যুক্তরাজ্যের ছারি শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দল পাল্টান তিনি। দেশে দলীয় পদ এবং আওয়ামী লীগের প্রতীক পাওয়ার জন্য নিজের টাকাকে ম্যাজিক হিসেবে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি পান পদ-পদবি। যা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের কাছে সোনার হরিণের মতোই! টাকার জোরে পরপর দুবার নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি ভাগিয়ে নিয়েছেন দলের শীর্ষ দু’পদের একটি।
শুধু তাই নয় দলীপদ ও চেয়ারম্যানের প্রভাবে অনেক নিরীহ মানুষকে জেলও খাটিয়েছেন তিনি। তাঁর ঘৃণ্য রাজনীতির বলি হয়ে মামলার আসামি হতে হয়েছে ব্রিটেনের সাবেক এক ডেপুটি মেয়রকে।
মামলায় ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্যের উস্টার ওরসেস্টার সিটির সাবেক কাউন্সিলর ও ডেপুটি মেয়র, লেবার পার্টির নেতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের বড় নেতা হন। মোগলগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আকরম উদ্দিন, মদরিছ আলী, জমসিদ আলী, ছরকুম আলী, আব্দুর রউফ, সাবেক চেয়ারম্যান একেএম আব্দুল্লাহ, শামসুল ইসলাম টুনুসহ সবাই জনবান্ধব ছিলেন। তারা জনগণের কাছাকাছি থেকে উন্নয়ন করেছেন। সেক্ষেত্রে হিরন মিয়া ব্যতিক্রম। তিনি ভোট ডাকাতি করে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এখন জনগণের সম্পদ খাদ্যসামগ্রী ডাকাতি করেছেন! জনগণ তার ডাকাতি করা মালামাল উদ্ধার করেছেন। ড. নজরুল বলেন, হিরন মিয়া ভালো মানুষ হলে জনগণের সম্পদ লুট করতো না। আমি দেশে আমার মাকে দেখতে গিয়েছিলাম, সে অন্যায়ভাবে আমাকে মামলার আসামি করে, পরে আমাকে প্রস্তাব দেয় ১ কোটি টাকা দিলে সে আমাকে মামলা থেকে মুক্তি দেবে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় অবশেষে আমি ব্রিটেনে ফিরে আসি।
ড. নজরুল বলেন, ভোট ও ত্রাণ চোর হিরনের শাস্তি চাই।