• ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে চার উপজেলায় আকস্মিক বন্যা, জরুরি মাইকিং

bijoy71news
প্রকাশিত মে ২৯, ২০২৪
সিলেটে চার উপজেলায় আকস্মিক বন্যা, জরুরি মাইকিং

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের চার উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়।

আকস্মিক বন্যা মোকাবেলায় জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যাতে আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দিরা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে পারেন। আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে জরুরি মাইকিং করা হচ্ছে।

বুধবার (২৯ মে) সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সিলেট এবং এর উজানে টানা ভারী বর্ষণের কারণে ফুঁসে উঠছে এ অঞ্চলের নদীগুলো। বিশেষ করে প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার অবস্থা অনেকটা বেসামাল। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সুরমা নদীর পানি। সিলেট শহরের অনেক এলাকার রাস্তা তলিয়ে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় ভয়ে আছেন সিলেট নগরীর লোকজনও।

জেলা প্রশাসন জানায়, স্থানীয় বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি অতিমাত্রায় সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নামায় এমন আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যেই গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গোয়াইনঘাটের কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ উঠতে শুরু করেছে।

এছাড়া আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সার্বক্ষণিক তদারকি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


রিডিং অনুযায়ী সিলেটের সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। মঙ্গলবার দিবাগত রাতের বিরামহীন বৃষ্টিপাতের পর বুধবার সকাল ৬টার দিকে এ পয়েন্টে অনেক পানি বৃদ্ধি পায়। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৩ দশমিক ৭৪ মিটার যা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কানাইঘাট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬ মিলিমিটার বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।

সুরমার মতোই ফুঁসছে কুশিয়ারা। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৯ দশমিক ৪৫ মিটার কিন্তু শ্যাওলায় ১৩ দশমিক ৫ মিটার, আমলসিদ পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। সারিনদীর ডাউকি পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১২ দশমিক ৫ মিটার যা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুরের ইউএনও জাহাঙ্গীর বখত জানান, এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬ মিলিমিটার।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি। আমি নিজে বন্যা পরিস্থিতি তদারকি করছি। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেলের অফিসারসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্যাদুর্গত ও ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাসমূহে জনপ্রতিনিধিগণসহ সরেজমিনে কার্যক্রম পরিচালনা করছি সকাল থেকে। যে সকল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবিত হতে পারে সে সকল এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার ও দোকানসমূহ থেকে জানমাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করছি। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবনপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কের দুটি পয়েন্টে যথাক্রমে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।

হাওরাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দি। রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি। আমি নিজে কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকাসহ বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা পরিদর্শন করেছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ-সুবিধাসহ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চালের মজুত রেখেছি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবনপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

কানাইঘাট উপজেলার প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট টু বাগান সংযোগ সড়কের মন্দির, আমবাড়ি, আমরি খাল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে।

নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরের মানুষ পানিবন্দি। ১ ও ২ নম্বর ইউপির মুলাগুল বাজার, কান্দলা, মেচা, উত্তর ও দক্ষিণ লক্ষ্মীপ্রাসাদ, কুওরগড়ীতে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে শালিক রুমাইয়া বলেন, আমি সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের চারিকাটা ও নিজপাট ইউনিয়নের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ প্রস্তুত রেখেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সিলেটের ওপর দিয়ে গিয়ে ভারতের মেঘালয়ে প্রবেশ করেছে, এর প্রভাবে সিলেট ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে যার দরুন সিলেটের নদীগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫-১৬ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি নামতে শুরু করলে এ পানি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কমে যাবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন, লেঙ্গুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে। এই উপজেলা ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবন প্রবণ এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

এছাড়া সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলায় নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেলা, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওড়, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ ও বাওন হাওড়সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, দুপুর ১২টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদী জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৪৬ দশমিক ০১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।