• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ঘরে বিদ্যুৎ নেয়ার আগেই সেই বিদ্যুতে প্রাণ গেলো পরিবারের সবার

bijoy71news
প্রকাশিত মার্চ ২৭, ২০২৪
ঘরে বিদ্যুৎ নেয়ার আগেই সেই বিদ্যুতে প্রাণ গেলো পরিবারের সবার

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় বসতঘরে বিদ্যুৎপৃষ্ট মারা যাওয়া একই পরিবারে ৫ জনের মৃত্যুতে শোক বইছে পুরো জুড়ী উপজেলা জুড়ে।

৩৩ হাজার ভল্টের লক্কর ঝক্কর বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে সর্বমহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেকে বলছেন পুরনো লাইন টানানোর কারণেই আজ এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। একটি পরিবার নিমিষেই শেষ হেয়ে গেল।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে ভোরে বসতঘরের মধ্যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- ফয়জুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া (১৫), সাবিনা (৯) এবং ছেলে সায়েম (৭)। এ ঘটনায় তাদের এক কন্যা সন্তান সোনিয়া আক্তার (১২) আহত হয়েছে। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চেয়েছিলেন ফয়জুর ও তার পরিবার। বাড়িতে লাগিয়েছিলেন মিটারও। এ নিয়ে বেশ খুশি ছিলেন সবাই। দারিদ্রতার কারণে একটু একটু করে সবকিছুর ব্যবস্থাও করছিলেন। কিন্তু, স্বপ্নের এই বিদ্যুতেই পৃষ্ট হয়ে স্বপরিবারে প্রাণ হারিয়েছেন বাকপ্রতিবন্ধী ফয়জুর রহমান। বিদ্যুতের আলোয় ঘর আলোকিত হয়নি আর। তার আগেই তাদের জীবনে নেমে এসেছে চির অন্ধকার।

নিহতদের প্রতিবেশিরা জানান, ফয়জুর রহমান একজন বাক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তিনি সম্প্রতি তার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার জন্য মিটার লাগিয়েছিলেন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় সেই মিটারটি কিনে দেন আরেক প্রতিবেশী।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মঙ্গলবার সকালে তিনি ফয়জুর রহমানের ঘরে বিদ্যুৎপৃষ্ট হবার খবর পান। পরে ঘটনাস্থলে এসে ফয়জুর ও তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের লাশ দেখতে পান তিনি। একই পরিবারের ৫ জনের এমন অকালমৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে গত রাতের ঝড়-বৃষ্টির কারণে বজ্রপাত বিদ্যুতের তারে পড়ে সেই তার ঘরের উপর পড়ে পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে তারা মারা গেছেন। যে বিদ্যুৎ লাইনটি এখানে পড়েছিলো এটি ১১ হাজার কেভির একটি লাইন। এবং বাড়িটাও বিদ্যুতের লাইন যেদিক দিয়ে গেছে তার একদম নিচে অবস্থিত। এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। এ সময় সর্বসাধারণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক হবারও আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।

জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক বলেন, পল্লী বিদ্যুতের অবহেলার কারণে আজ এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ঘটনায় মর্মাহত। অবিলম্বে পল্লী বিদ্যুতের সব লাইন ইনসুলেটেড লাইন করতে হবে যাতে করে এমন আর কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। পল্লী বিদ্যুৎ যদি আমার জুড়ী উপজেলায় ইনসুলেটেড লাইন না করে তাহলে জুড়ীতে পল্লী বিদ্যুতের লাইন রাখবো না।

পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুয়েল উদ্দিন জানান, নিহত ফয়জুর রহমান একজন বাক প্রতিবন্ধী লোক ছিলেন। তিনিসহ তার পরিবারের ৫ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পল্লী বিদ্যুতের অবহেলার কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে। পল্লী বিদ্যুতের আরো ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মানুষের বাড়ীর উপর থেকে না সড়ানো হলে এ ধরনের আরো ঘটনা ঘটতে পারে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পল্লী বিদ্যুৎ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, পাঁচজন নিহতদের ঘটনায় আমরা শোকাহত। এ ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন শিশুর চিকিৎসায় আমরা পাশে থাকবো।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নিহতদের নিজগ্রাম পূর্ব গোয়ালবাড়ীর ভাঙ্গার পার এলাকার স্থানীয় স্কুল মাঠে তাদের জানাযা শেষে দাফন করা হয়।

জানা যায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ সুপারসহ উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তাদের জানাজায় হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন।