জোর জল্পনা চলছিল কয়েক মাস ধরেই। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলে আসছিল, বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একক পুরস্কার ব্যালন ডি’অর এ বছর লিওনেল মেসিই জিততে চলেছেন। অপেক্ষা ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। সব জল্পনাকে সত্যি করে অবশেষে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের হাতেই উঠল ব্যালন ডি’অর-২০২৩।
এই নিয়ে আট বার পুরস্কারটি জিতলেন বিশ্ব ফুটবলের ‘জাদুকর’ খ্যাত তারকা। সোমবার রাতে প্যারিসের তিয়াটর দু শাতলে অষ্টম ব্যালন ডি’অর বিজয়ী হিসেবে মেসির নাম ঘোষণা করে তার বর্তমান ক্লাব ইন্টার মিয়ামির কর্ণধার এবং কিংবদন্তি ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহাম। এ সময় মেসির তিন ছেলে এবং স্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
‘ব্যালন ডি’অর ২০২৩ জেতার দৌড়ে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি এবার পেছনে ফেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজীয় তারকা আর্লিং হলান্ড এবং পিএসজির ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে।
এদিন ব্যালন ডি’অর হাতে নিয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে মেসি বলেন, ‘মুহূর্তটা উপভোগের। এখানে আরেকবার উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত।’
এ সময় বিশ্বকাপ জেতা নিয়েও নিজের অনুভূতিটা আরও একবার জানান মেসি। বলেন, ‘বিশ্বকাপ জেতাটা ছিল আমার স্বপ্ন। এটা খুবই বিশেষ ব্যাপার ছিল যে, অন্য দেশের মানুষরাও চেয়েছে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক।’
নিজের অর্জন নিয়ে মেসি বলেন, ‘আমার এমন ক্যারিয়ার আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি যা অর্জন করেছি তা করার জন্য আমার ভাগ্য দারুণ সুপ্রসন্ন ছিল। আমি বিশ্বের সেরা দলে খেলেছি, ইতিহাসের সেরা দলে খেলেছি। এটা আমার জন্য ট্রফি জেতা এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার জেতার কাজটাকে সহজ করেছে।’
‘ব্যালন ডি’অর তার কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় জানিয়ে মেসি বলেন, ‘আমি আমার ক্যারিয়ারে এটা অনেকবার বলেছি যে, ব্যালন ড ‘অর গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটা সবচেয়ে সুন্দর পুরস্কার। কিন্তু আমি কখনোই এটাকে অতটা গুরুত্ব দিইনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলীয় অর্জন।’
গত মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে মেসির। মৌসুমটিতে ক্যারিয়ারে একমাত্র অপূর্ণতাটুকুও ঘুচিয়েছেন তিনি। ৩৬ বছর পর মেসির হাত ধরেই বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হন তিনি। এবার অষ্টম ব্যালন ডি’অরও জিতে নিলেন।
সাতটি ব্যালন ডি’অর জিতে এমনিতেই ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি সবার উপরে লিখিয়ে রেখেছিলেন লিওনেল মেসি। আট নম্বরটি জিতে পৌঁছে গেলেন ইতিহাসের আরও উপরে। ফুটবল বোদ্ধারা বলছেন, এই রেকর্ড ভাঙ্গা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি’অর জেতার রেকর্ডে মেসির ধারে কাছে আছেন শুধু পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তিনি ছয় বার জিতেছেন এই পুরস্কার। মেসির কাতারে যেতে হলে আরও দুই বার ব্যালন ডি’অর জিততে হবে রোনালদোকে। কিন্তু সেটি সম্ভব নয় বলেই মত ফুটবল বোদ্ধাদের।
এর কারণ, রোনালদোর ক্যারিয়ার প্রায় শেষের দিকে। বড় জোর আর একটি বিশ্বকাপ খেলতে পারেন তিনি। বয়সে তিনি মেসির চেয়ে বেশ সিনিয়র। ক্লাব ফুটবলেও যে খুব বেশিদিন খেলতে পারবেন রোনালদো, তেমনটাও নয়। ফলে মেসির আটটি ব্যালন ডি’অর জেতার রেকর্ড যুগের পর যুগ টিকে থাকবে।
প্রসঙ্গত, মেসির পাশাপাশি এবার বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন স্প্যানিশ বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার আইতানা বোনামাতি। সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের কোপা ট্রফি জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদের ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহাম। সেরা গোলরক্ষক হিসেবে ‘লেভ ইয়েশিন ট্রফি’ জিতেছেন আর্জেন্টাইন বাজপাখি এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
এছাড়া নরওয়ের তারকা ফুটবলার আর্লিং হলান্ড জিতেছেন জার্ড মুলার ট্রফি। সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে এই ট্রফি হাতে উঠেছে তার। দাতব্য কাজে সম্পৃক্ততার জন্য নসক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। পাশাপাশি বর্ষসেরা ক্লাবের তকমা জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি।