• ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সরকারিতে সংকট, বেসরকারিতে বিলের বোঝা সিলেটে

bijoy71news
প্রকাশিত এপ্রিল ২৮, ২০২১
সরকারিতে সংকট, বেসরকারিতে বিলের বোঝা সিলেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সিলেটে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সরকারিভাবে তেমন বাড়ছে না চিকিৎসার ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় উচ্চবিত্তরা করোনার চিকিৎসা নিতে পারলেও মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য করোনার চিকিৎসা নেওয়া যেন এক মহা সংকট। আর আইসিইউ পাওয়া যেন এক সোনার হরিণ। যে হরিণ পেতে নিম্নবিত্তদের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে।
সিলেটের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটে সরকারিভাবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে একমাত্র ডা. শহিদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল। এর সাথে আছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওসমানীতে বিগত সপ্তাহ দুয়েক থেকে নতুন ভবনে ২০০ শয্যার আলাদা করোনা ইউনিট খোলার গল্প শোনানো হলেও এখনও তার পূর্ণতা পায়নি। ফলে হাসপাতালের মূল বিল্ডিংইয়ে চলছে করোনার জোড়াতালির চিকিৎসা। এ দুই হাসপাতাল মিলে এক সাথে করোনা আক্রান্ত মাত্র ৩ শত মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। আর আইসিইউ সুবিধা কেবল শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১৬ জনকে দেওয়া সম্ভব। আর বাদবাকি সকল হাসপাতালই বেসরকারি।
বেসরকারি এসব হাসপাতালের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা এলাকায় নর্থ ইস্ট হাসপাতালে মোট ৬০টি করোনা বেড আছে আর আইসিইউ আছে ১৩টি।
অপরদিকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা বেড আছে মাত্র ৪৩টি। যেখানে আইসিইউ বেড আছে মাত্র ৮টি।
অপরদিকে নগরীর দরগাহগেট এলাকায় নুরজাহান হাসপাতালে মোট করোনা বেড আছে মোট ২৩টি। যার ১১টি আইসিইউ বেড।
সে হিসেবে সিলেটে সরকারি এবং বেসরকারি মিলে এক সাথে মাত্র ৪ শত ২৬ জন মানুষকে করোনা চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এসব তথ্য অনুযায়ী মহামারী করোনায় যাদের আইসিইউ প্রয়োজন তাদের অধিকাংশকেই যেতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে। আর গুনতে হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। কিন্তু এসব বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঠিক তদারকি। ফলে টাকা আদায় করা হচ্ছে যার যেমন খুশি তেমন।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. নূরে আলম শামীম বলেন, ‘সকল বেসরকারি হাসপাতালকে একটি নির্ধারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা কোন খাতে কত টাকা রাখতে পারবে এসব নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে আমি নতুন এসেছি। পরিচালক ম্যাডাম অসুস্থ উনি ভালো হলে কথা বললে উনি ভালো বলতে পারবেন।’
এদিকে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিলেট বিভাগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ হাজারের উপরে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আড়াইশোর মতো রোগী। আর সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৩৩৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৬৭ জন, সুনামগঞ্জে ২৭ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন এবং মৌলভীবাজারের ২৭ জন।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ভাবে করোনার চিকিৎসায় শামসুদ্দিন হাসপাতালে থাকা ১০০ বেডের মাঝে ১৬টি আইউসিইউ বেড থাকলেও সবগুলোতেই রোগী। একটিও খালি নেই। এমনকি যে পরিমাণ চাহিদা তার তুলনায় খুবই অপ্রতুল আইসিইউ। আর সাধারণ বেডের অধিকাংশই প্রায় ভর্তি। তাছাড়া সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০টি করোনা বেড থাকলেও নেই করোনা আইসিইউ। সে ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন কোন রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হলে জীবন বাঁচানোর তাগিতে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু বেসরকারি এসব হাসপাতালে গেলেও কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা বিল পরিশোধ করে প্রাণে ফিরছেন আবার কারো স্বজনরা কাফনে মোড়ানো লাশ নিয়ে ফিরছেন। সে ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিলে সিলেটের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি নিয়েও আছে প্রশ্ন। আর চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে করোনার চিকিৎসা নিয়ে নানা হতাশার মাঝে ফের আশার বাণী শোনালেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক হিমাংশু লাল রায়। তিনি জানান- খুব শীঘ্রই নতুন ভবনে ২০০ শয্যার করোনা ইউনিট শিফট করা হচ্ছে। যেখানে থাকবে ১০টি পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ বেড। আরও ১০টি আইসিইউ বেড কেনার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি প্রয়োজনভেদে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে রয়েছে বেশ কিছু অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। এছাড়া আইসিইউর উপর চাপ কমাতে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা সহজলভ্য করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
সব মিলিয়ে দেশের অন্যান্য শহর থেকে সিলেটে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভাল বলে তিনি জানান।
এদিকে করোনার জন্য প্রস্তুত করা হলেও কাজে লাগানো হচ্ছে না সিলেটের বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে। গেলো বছর করোনার শুরুর দিকে করোনা চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে এটিকে প্রস্তুত করা হলেও এখন আর কোন কাজেই আসছে না। চিকিৎসার জন্য করোনা আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটাছুটি করলেও সরকারি এ হাসপাতালটি এখন যেন বেকার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন ‘প্রয়োজন হলে চালু করা হবে হাসপাতালটি।’
করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরেও বন্ধ থাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি চালু না করা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. নূরে আলম শামীম জানান, এটা চালু করার আপাতত কোন চিন্তা নেই। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি খারাপ হলে তখন হয়তো চিন্তা করা যাবে।
এমনকি বর্তমানে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সন্তোষজনক দাবি করে শামীম বলেন, আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মানুষ যদি সচেতন না হন, তাহলে সামনের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে আপনারাই তো বুঝতে পারছেন।