‘আমাদের পরিকল্পনা আছে প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের জন্য। সেই পরিকল্পনায় পূর্ণ আস্থা আছে। এখন মাঠে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে কোনো দোটানা ছাড়া’—কথাগুলো চট্টগ্রাম টেস্টের আগে বলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট।
একই কথা ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার ও কোচরা বলেছেন বারবার। কিন্তু ক্যারিবীয়দের বিশেষ পরিকল্পনায় বাংলাদেশি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ধরা পড়লেও মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন ব্যতিক্রম।
সফরকারীদের পাতা ফাঁদ এড়িয়ে মিরাজ করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ১৬৮ বলে তাঁর ১০৩ রানের ইনিংসে ভর করেই চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে চারশ টপকেছে বাংলাদেশ ।
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে রানটা একটু দ্রুতই করে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে রানরেটে সাড়ে তিনের আশপাশে থাকে। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে যেমন বাংলাদেশের রানরেট ছিল ৩.৬৩।
এর আগের টেস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলেও দুই ইনিংসেই রানরেট ছিল প্রায় তিন ছুঁইছুঁই (২.৯, ২.৮)। ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের ঢাকা টেস্টে এক ইনিংস ব্যাটিং করে বাংলাদেশ, যেখানে বাংলাদেশের রানরেট ছিল ৩.২৯।
একই সিরিজে চট্টগ্রামেই দুই ইনিংসে বাংলাদেশ ৩.৪৯ ও ৩.৪৮। একই বছর ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের রানরেট ছিল ৩.২৬ ও ৪.১৪।
আটে নেমে দারুণ ব্যাট করেন মিরাজ ।
ঘরের মাঠে সর্বশেষ এই পাঁচ টেস্টের চারটিই বাংলাদেশ জিতেছে দাপট দেখিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার বাংলাদেশে এসেছে এই দ্রুত রান তোলা থামানোর পরিকল্পনা নিয়ে। বাংলাদেশ টপ অর্ডারে একমাত্র সাদমান ইসলাম ছাড়া বাকি সব ব্যাটসম্যানই দ্রুত রান তুলতে অভ্যস্ত।
আর রানটা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা নিয়ে থাকেন মূলত বাউন্ডারিতে। বাউন্ডারি থামিয়ে রান শুকিয়ে ফেলার পরিকল্পনায় ম্যাচের প্রথম পাঁচ সেশনের মধ্যে তিন সেশনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা ছিলেন সফল।
কাল দিনের প্রথম দুই সেশনে বাংলাদেশের রানরেট ছিল তিনের নিচে। দিনের শেষ সেশনে রান বাড়ে লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে।
প্রথম দিন শেষে উইন্ডিজ স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানের আক্ষেপ ছিল এটিই, ‘আমরা শেষ সেশনে রানরেটটা বাড়তে দিয়েছি। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রান করা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম।’
একই ধারা আজ সকালেও দেখা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ে। ওয়ারিক্যান লেগ সাইডে ৭ ও অফ সাইডে ২ জন ফিল্ডার রেখে লেগ স্টাম্পে বল করে গেছেন ক্রমাগত। সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান—প্রত্যেকেরই স্বাভাবিক ব্যাটিং থামিয়ে দিতে সক্ষম হয় ক্যারিবীয়রা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের ক্লান্ত করে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের ক্লান্ত করে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজছবি: শামসুল হক
মিরাজ ক্রিজে এসে পরিস্থিতি বদলে দেন। ক্লান্ত উইন্ডিজ বোলারদের পেয়ে মিরাজ ব্যাট চালান চাবুকের মতো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ের বিপক্ষে তিনি কাভারে খেলেছেন, লেট কাট করেছেন প্রচুর। সুইপ, রিভার্স সুইপ করেছেন। ক্রিজে ছেড়ে খেলেছেন। টপ অর্ডারের সাত ব্যাটসম্যান যা করেননি, মিরাজ ঠিক তা–ই করেছেন। পরে বাধ্য হয়ে মিরাজের জন্য ফিল্ডিং বদলাতে হয় ক্যারিবীয়দের।
সেই সুযোগে এক-দুই রান বের করেছেন এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার। এক কথায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশেষ পরিকল্পনা জয় করে মিরাজ নামের পাশে পেয়েছেন প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি, যা বাংলাদেশকে দিয়েছে টেস্টে দাপট দেখানোর সুযোগ, বাড়িয়েছে মিরাজের ব্যাটিং মর্যাদা।