• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ভার্চুয়াল সেবায় ‘এইড অফ সিলেট’

bijoy71news
প্রকাশিত মে ২৬, ২০২০

আপনার প্রসুতি স্ত্রীকে নিয়ে সমস্যা ? ভয় নেই একেবারেই। পাশে আছে ‘এইড অফ সিলেট’। নিয়মিত চেকআপ করাতে পারছেননা ? ‘এইড অফ সিলেট’ আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। এতো গেলো শারীরিক সমস্যা। আপনার আইনগত বিষয় নিয়েও আপনার পাশে পরম নির্ভরতায় ‘এইড অফ সিলেট’। বিশ্বাস হচ্ছেনা ? আজই ‘এইড অফ সিলেট’ গ্রুপে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আপনি মধ্যবিত্ত / অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত ? আপনার গৃহে খাবারের প্রয়োজন? ভয় নেই। গ্রুপে নক করলেই একাধিক সুহৃদ পাশে দাঁড়াবে আপনার। ভাবছেন-ফি’ কেমন? একদমই ফি নেই। আপনার সেবা আপনিই পাবেন। মিডিয়া হিসেবে পাশে থাকবে ‘এইড অফ সিলেট’। একটি গ্রুপের নাম, একটি নির্ভরতার নাম একটি বিশ্বাসের নাম। না! এতোসব সেবার জন্য আপনাকে কোত্থাও যেতে হবেনা। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার অথবা আইনজীবি অথবা কোনো সেবা আপনি পাচ্ছেন ঘরে বসেই।

চলছে করোনাকাল। গৃহবন্দী মানুষের হাতে অফুরন্ত সময়। উদ্বেগ,উৎকণ্ঠা সাথে নিয়েও থেমে নেই মানুষ। দু:সময়ে ভালোবাসার হাত প্রসারিত করে মানুষই দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। একের পর এক সহযোগীতা নিয়ে সরকারী উদ্যোগেও চলছে খাদ্য সহায়তা বিতরণ। তবুও ভালো নেই মানুষ।

করোনা ভয়ে ঘরে থেকেও মোটেও ভালো নেই অধিকাংশ মানুষ। কেউবা শিক্ষা বঞ্চিত সন্তান নিয়ে উৎকণ্ঠায়, কেউ আবার শারীরিক সমস্যা নিয়ে জর্জরিত। এই অবস্থায় পরিবেশ এবং পরিস্থিতির কারণে কেউই হচ্ছেননা হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকমুখী। এই অবস্থায় সবচাইতে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা। নিয়মিত চেকআপের সুযোগ না পেয়ে অনাগত শিশুর চিন্তায় প্রহর কাটছে প্রতিটি মায়ের।

এমন হতাশার সময়ে আলোর দিশা হয়ে পাশে দাঁড়ালো ভার্চুয়াল সেবামুলক সংগঠন ‘এইড অফ সিলেট’। করোনাকালীন একটি নির্ভরতার নাম। একটি বিশ্বাসের নাম। এটি একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। জন্মকালে কোনো হাঁক-ডাক নেই। ছিলোনা বিশদ কোনো পরিকল্পনাও। ইচ্ছেটা কেবলই মানবতার। ব্যাস, শুরু হয়ে গেলো ‘এইড অফ সিলেট’ এর যাত্রা। চলতি মাসের ১৫ তারিখে জন্ম নেওয়া এই সংগঠনের উপকার ভোগীর সংখ্যাটিও শ’য়ের উপরে। শুরু থেকেই গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে ডাক্তার,পুলিশ,আর্মি, আইনজীবী,সাংবাদিক,ইঞ্জিনিয়ার,ব্যাংকারসহ নানা পেশার লোকজন।

সবে মাত্র উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি শেষ করেছে জান্নাতুল নওশীন আভা। করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি ইঙ্গিত বারবার দোলা দিচ্ছে মনটাকে। সেই উদ্দেশেই সহপাঠি সজিব কুমার সরকারকে সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ‘এইড অফ সিলেটের’।

গ্রুপ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন দুইজন এডমিন। গ্রুপের সাথে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৬শ’ জন মানবিক মানুষ। গ্রুপের এডমিন জান্নাতুল নওশীন আভা বলেন, বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সাহায্য চেয়ে এই গ্রুপে পোস্ট করলে সব মেম্বার মিলে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন। মোট কথা, সিলেটের সব পেশার মানুষ একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে এই গ্রুপটির মাধ্যমে সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে। এই গ্রুপে আপনারা আপনাদের যেকোনো ধরনের সহায়তা চেয়ে,কোনো ধরনের দ্বিধা না করে গ্রুপে পোস্ট করে সাহায্য চাইতে পারেন।

জান্নাতুল নওশীন আভা বলেন, কথায় বলে আয়ু যতদিন, জীবন ততদিনই। তাই জীবন সময়ে বাঁধা। তবে, জীবনের অনুভূতিগুলো পুনর্জন্মের অধিকারী। তারা জন্মায়, মরে, আবার জন্মায়। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুখ, দুঃখ, ভালো লাগা, না লাগার মতো অনুভূতিগুলো অবস্থান বদলায়। এ সবই আবেগ নির্ভর। আবেগ মহাশক্তিধর হলেও আয়ু বড়ই কম। আবেগ অনেকটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। মাঝসমুদ্রে তৈরি হয়, ভাঙে, আবার তৈরি হয়। তীরে আছড়ে পড়লে ঢেউ হয়ে যায় ফেনা। চোখের পলকে শুষে নেয় বালুকাবেলা। প্রবল শক্তিধর হলেও ঢেউয়ের এটাই পরিণতি। মানুষের আবেগ শুষে নেয় কঠিন বাস্তব। তফাৎ একটাই। জলরাশির প্রাচুর্যে ভরপুর সমুদ্রের ঢেউ সৃষ্টির ক্ষমতা অসীম। কিন্তু, আবেগ সীমায় বাঁধা। তাই সে মানুষকে বেশি দূর ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। বাস্তবের রুক্ষভূমি শুষে নেয় আবেগ। আবেগহীন মানুষ হারায় মানবিকতা, উদারতা। করোনা বিরোধী লড়াইয়ে এখন একমাত্র হাতিয়ার উদারতা এবং মানবিক দায়িত্ববোধ। (তথ্যসূ্ত্র : সিলেট প্রতিদিন।)