• ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

দায় নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

bijoy71news
প্রকাশিত জুলাই ৩০, ২০২৪
দায় নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও নাশকতাসহ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি ও ক্ষয়ক্ষতির দায় নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। 

সোমবার (‌২৯ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও তার পরিপ্রেক্ষিতে ছয় দফা দাবি সম্বলিত কর্মসূচি ঘোষণা করে এই আহ্বান জানায় যুগপৎ আন্দোলনের এই জোট। 

রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। 

তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব রাজনৈতিক দল ও জোটসহ গণতন্ত্র মঞ্চ সারা দেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি করবে। কোটা আন্দোলন দমনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। 

শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে সরকার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে না গিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যাসহ নাশকতার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর দায় সরকার ও সরকারি দলের। জনগণের জানমালের বিপুল এই ক্ষয়ক্ষতির দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগ করতে হবে।

চলমান অরাজক পরিস্থিতি সম্পর্কে গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দফা পর্যালোচনা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, তাদের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে সরকার নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। 

হেলিকপ্টারে গানশিপ ব্যবহার করে উপর থেকে গুলি করা হয়েছে, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। এমনকি আবাসিক ভবনে আক্রমণ করে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্ত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতালে না নিয়ে বরং তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকেও সম্পূর্ণ বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

পর্যালোচনা তুলে ধরে সাইফুল হক আরও বলেন, এখনো পর্যন্ত মামলার সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিরোধী দলের সাড়ে ১২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

এ অবস্থায় গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন সাইফুল হক। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার করে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীসমূহকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু, টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমের স্বাধীন দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ডসহ সমগ্র ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত, অপরাধীদের চিহ্নিত ও তাদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ছাত্র-জনতাসহ বিরোধী দলসমূহের নেতাকর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে শারীরিক মানসিক নির্যাতন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুম হওয়া ও তুলে নেওয়া নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা গণতান্ত্রিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে এবং ব্লক রেইডের ছত্রছায়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর হামলা, আক্রমণ, ভাঙচুর, লুটপাট ও নির্যাতন-নিপীড়ন এখনই বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের ড. আবু ইউসুফ সেলিম উপস্থিত ছিলেন।