• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিদ‌্যুৎপৃষ্ট হয়ে মা-বাবা, ভাই-‌বোনের পর ছোট্ট সো‌নিয়াও না ফেরার দেশে

bijoy71news
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০২৪
বিদ‌্যুৎপৃষ্ট হয়ে মা-বাবা, ভাই-‌বোনের পর ছোট্ট সো‌নিয়াও না ফেরার দেশে

মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে দগ্ধ শিশু সোনিয়া আক্তারকে তার বাবা-মা আর তিন ভাইবোনের পাশে শায়িত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ঘরে পড়ে পরিবারের পাঁচজন নিহত হলেও বেঁচে ছিলেন ১২ বছরের সোনিয়া।

২৫ ভাগ দগ্ধ হওয়া সোনিয়াকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

বুধবার (২৭ মার্চ) ভোর ৫টার দিকে সেখানে সোনিয়াকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান জুড়ী থানার ওসি এস এম মাঈনুদ্দিন।

সোনিয়ার মৃত্যুতে জুড়ীর দিনমজুর ফয়জুর রহমানের পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, বাচ্চাটাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঢাকা মেডিকেল থেকে পরে আমাদের এখানে আনা হয়। কিন্তু আগেই শিশুটির মৃত্যু হওয়ায় আর ভর্তি করা হয়নি।

ঢাকা থেকে সোনিয়ার মরদেহ স্বজনরা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের ভাঙ্গার পাড় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়।

গ্রামের বাসিন্দা সোনিয়ার মামা আজির উদ্দিন বিকালে বলেন, গ্রামেই জানাজা শেষে দুপুর ২টায় সোনিয়াকে তার বাবা-মা আর তিন ভাই-বোনের পাশে দাফন করা হয়েছে। আমার বোনের পরিবারের আর কেউ রইল না।

বাকপ্রতিবন্ধী দরিদ্র ফয়জুর রহমান এলাকায় অন্যের জমিতে টিনের ঘরে তুলে পরিবার নিয়ে থাকতেন। সেই ঘরে বিদ্যুতের লাইন নেওয়ার মত সামর্থ্য তার ছিল না।

মঙ্গলবার ভোর রাতে ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাতের মধ্যে বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ফয়জুরের টিনের চালে। পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ যায় ফয়জুর (৫০), তার স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), তাদের মেয়ে সামিয়া (১৫), সাবিনা (৯) এবং ছেলে সায়েম উদ্দিনের (৭)।

সোনিয়াকে প্রথমে মৃত ভেবে লাশের সারিতেই ফেলে রেখেছিলেন উদ্ধারকারী স্বজনরা। পরে সে নড়ে উঠলে তাকে দ্রুত জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত সে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে ছিল। তারপর হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিলে রাতে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

স্থানীয় উত্তর গোয়ালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সোনিয়া।

মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় হাজী ইনজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তার বাবা-মা আর ভাই-বোনদের জানাজা হয়। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। সোনিয়াকেও সেখানেই দাফন করা হয়েছে বলে তার মামা আজির উদ্দিন জানিয়েছেন।